কাজী আশফাক রহমানঃ একাত্তরের গৌরব উজ্জল মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে সমৃদ্ধ অর্জন। মহাকাব্যিক এই জনযুদ্ধকে হৃদয় ধারণ করে পরবর্তী প্রজন্মের মাঝেও তা সঞ্চারিত করার প্রয়াসে ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল প্রতিবছর আয়োজন করে মহান বিজয় দিবস। ১৩ ডিসেম্বর (রবিবার) স্কুল প্রাঙ্গনে আয়োজিত হয়েছিল বিজয়ের এই উৎসব। এই অনুষ্ঠানে প্রদান করা হয় বর্ষ সমাপনী সনদ ও ফলাফল বিবরণী। কোভিড উনিশ মহামারি বিধিনিষেধের কারণে অভিভাবক ও বাইরের দর্শকদের এবারের আয়োজনে আমন্ত্রণ জানানো সম্ভব হয়নি।

সকাল দশটায় শ্রেণীকক্ষে বর্ষ সমাপনী সনদ ও ফলাফল বিবরণী প্রদানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা ঘটে। জ্যেষ্ঠ শিক্ষক নাসরিন মোফাজ্জলের পরিচালনায় অধ্যক্ষ রোকেয়া আহমেদ, সংশ্লিষ্ট শ্রেণী শিক্ষক রুমানা সিদ্দিকী, আঞ্জুমান আরা আইরিন, শারমিন সুলতানা, নুসরাত জাহান এবং মাহসিনা জেলিনের উপস্থিতিতে ছাত্রছাত্রীদের হাতে সনদ তুলে দেন স্কুলের ব্যবস্থাপনা পর্ষদ সদস্য আব্দুল জলিল।
এই পর্ব শেষে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলের পক্ষ থেকে আয়োজিত মধ্যেন ভোজনে যোগদান করে। দুপুরের খাবারের শেষে বেলা বারোটায় স্কুলের মিলনায়তনে শুরু হয় বিজয় দিবসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রথমে বাংলা স্কুল সাধারন সম্পাদক কাজী আশফাক রহমান সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে অনুষ্ঠানে স্বাগত জানান।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ছাত্রছাত্রীদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলেন একাত্তরে রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা, ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের সাবেক সভাপতি গোলাম মওলা। তিনি বাংলাদেশ সৃষ্টিতে জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অবদানের কথাও ছেলেমেয়েদের অবহিত করেন। প্রথমে স্কুলের ব্যবস্থাপনা পর্ষদ সদস্য নাজমুল আহসান খান একটি অসাধারণ শিশুতোষ গান গেয়ে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানকে ভিন্ন মাত্র দান করেন। ছাত্রছাত্রীদের অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বে, ছেলেমেয়েদের সাথে নিয়ে বিজয় দিবসের কেক কেটে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মদিনকে স্মরণ করেন স্কুলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল আহসান খান।

এরপর প্রায় এক ঘন্টা বাংলা স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা সবাইকে মোহগ্রস্ত করে রাখে। পাঁচটি একক আবৃত্তি,চারটি, বৃন্দ আবৃত্তি, তিনটি দলগত সংগীত এবং চারটি একক সংগীতে ছাত্রছাত্রীরা তাদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে সমর্থ হয়।বীরশ্রেষ্ঠ মুস্তাফা কামাল এর জীবন গাঁথা পড়ে শোনায় নুরিন। নিজের বই থেকে একটি গল্প বাংলায় পড়ে শোনায় মারজান। একক গান পরিবেশন করে জেইনা, নুরিন, রাসমিয়াহ ও এলভিরা। দ্বৈত সংগীতে অংশ নেয় রুশনান ও নাদিন। একক আবৃত্তি নিয়ে আসে ওয়াফি, রেইনর, স্বপ্নীল, এলভিরা, দৃপ্ত, আরিজ, সারিনা। বৃন্দ আবৃত্তিতে অংশ নেয় মারজান, সোহারদিতী, য়ারা, আরিয়ান, ইমরান, নারমিন, তাহমিন, সারিনা, রাসমিয়া, আরিজ, রুশনান, তায়শা, অলিভিয়া, মাহদিয়া, রিডা, তাসনিফ, রাকিন, নুরিন, এলভিরা, সম্প্রীতি, নাদিন, রেইনর, ওয়াফি, দৃপ্ত, স্বপ্নীল, রোদ্দুর, জায়ান ও সুহা।
এবারের বিজয় উৎসব আহবায়ক রুমানা সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় পুরো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন স্কুলের সংগীত শিক্ষক রুমানা ফেরদৌস লনি এবং বিজয় সাহা। তবলায় ছিলেন স্কুলের নিজস্ব শিল্পী বিজয় সাহা। শব্দ নিয়ন্ত্রণ করেন স্কুলের কার্যকরী কমিটির সহ সভাপতি ফয়সাল খালিদ শুভ। মঞ্চ নির্মাণ ও পরিকল্পনায় ছিলেন নির্বাহী সদস্য সাজ্জাদ সিদ্দিক, মেহেদী হাসান, নুরুল ইসলাম শাহিন ও তারিক আহমেদ।

প্রধান সমন্বয়কারী রুমানা খান মোনার তত্ত্বাবধানে বিজয় দিবস ও বর্ষ সমাপনী অনুষ্ঠানটি দুপুর আড়াইটায় শেষ হয়। সবশেষে স্কুলের সভাপতি মসিউল আজম খান স্বপন সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আগামী বছর অমর একুশের আয়োজনে আমন্ত্রণ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। প্রসংগত উল্লেখ ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল করোনা মহামারীর কঠিন সময়ে একবারের জন্যও বন্ধ না হয়ে অনলাইন ও মুখোমুখি মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্নভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে গেছে। বাংলা ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সব বাংলা ভাষাভাষীর জন্য প্রতি রবিবার সকাল দশটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকে।