দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মানব সভ্যতার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে এসেছে নভেল করোনাভাইরাস। বিশ্বের ২১০টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। হুমকির মুখে মানব জাতির অস্তিত্ব। দেশে দেশে চলছে লকডাউন, ঘরে বন্দি মানুষ। তবুও প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। আক্রান্ত বাড়ছে প্রতি মিনিটেই। মৃতপুরীতে পরিণত হয়েছে ইউরোপ আমেরিকা।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের এই ক্রান্তিলগ্নে সৌদি আরবের মহানুভবতার দু’টি ঘটনা উল্লেখ করছি। আমরা বিভিন্ন সময় সৌদি আরবের সমালোচনা করে থাকি। কিন্তু মানবিক সহযোগিতার দিক দিয়ে সৌদি সবসময়ই এগিয়ে।
বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস রোধে আন্তর্জাতিক সহায়তার অংশ হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ৫০ কোটি ডলার দান করেছে সোদি আরব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ডা. টেড্রোস আধানম গেবরিয়েসুস বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধের লড়াইয়ে সৌদি আরব সহায়তার মাধ্যমে উদারতা প্রকাশ করায় দুই পবিত্র মসজিদের জিম্মাদারের কাছে আমি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
মহামারি করোনাভাইরাসের এই দুর্বিষহ অবস্থায় সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে (ডব্লিউএইচও) অর্থায়ন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় মহাপরিচালক মার্কিন প্রেসিডেন্টের অর্থায়ন বন্ধের ঘোষণাকে দুঃখজনক বলে অভিহিত করেছেন। করোনাভাইরাসের মহামারি মোকাবিলায় বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
অপরদিকে সৌদি আরবের সকল করোনাভাইরাস রোগীদের সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ। সৌদি আরবের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. তৌফিক বিন ফাওজান আল-রাবিয়াহ সম্প্রতি রিয়াদে এক সংবাদ সম্মেলনে বাদশার আদেশের বিষয়ে এ ঘোষণা দেন। তিনি আরো জানান, দেশটির স্থায়ী ও অস্থায়ী সহ সব ধরণের বাসিন্দারা এ সেবা পাবেন।
কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন ঘোষণা করেছেন, করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগময় সময়ে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ছাড়া আর কারো দায়িত্ব নেবে না সরকার। স্কট মরিসন বলেছেন, যার জন্ম যে দেশেই হোক না কেন, তিনি যদি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হন তাহলে তাকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের। যারা অস্থায়ী ভিসা নিয়ে এদেশে আছেন নিজেদের খরচ বহনের সামর্থ্য না থাকলে তাদেরকে ফিরে যেতে হবে নিজ দেশে।
করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাব শান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা কঠোর না হয়ে একে অন্যের সাহায্যে এগিয়ে আসি। এই মহামারি আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়, মানুষের সংযোগ যেমন ভাইরাস ছাড়াতে পারে তেমনি অন্যদের সুস্থ করার জন্য সহযোগিতা ও মানবিক সংযোগের কোন বিকল্প নেই। এই মুহূর্তে সরাসরি সাহায্য করা সম্ভব নয় কিন্তু রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে থেকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমরা সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে পারি। বৈশ্বিক এই মহামারি থেকে সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে আমরা টিকে যাব ইনশাআল্লাহ্ এবং এই সহযোগিতার জন্য অবশ্যই আমরা আখিরাতে পুরস্কৃত হবো।