গায়ক শরিয়ত সরকার বিচারগানের একটি অনুষ্ঠানে ইসলাম ধর্মে গান-বাজনা সম্পূর্ণ জায়েজ বলে মোল্লাতন্ত্রের প্রতিনিধিদের চ্যালেঞ্জ করায় মৌলবাদীদের মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন। গায়ক শরিয়ত সরকার গান-বাজনা ইসলামে সম্পূর্ণ জায়েজ বলে দাবি করেন এবং যদি কেউ চায় তবে তিনি ৫০ লক্ষ টাকা নিয়ে চ্যালেঞ্জ করতে রাজি আছে বলে অনুষ্ঠানটিতে জানান। তিনি চ্যালেঞ্জটি ইসলামী দলিল দিয়ে মোকাবেলা করার কথাও বলেন।
তিনি চ্যালেঞ্জটি করেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার একটি বিচারগানের আসরে। পাশাপাশি তিনি অনুষ্ঠানে বাউল-মরমী-সুফি-সাধকদের মানবিক দর্শনও তুলে ধরেন। অথচ ওহাবী ও কট্টরপন্থী মোল্লারা গায়ক শরিয়ত সরকারের (৩৫) কথাকে অপব্যাখ্যা করে মামলা করায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করলে তিন দিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত। গত শনিবার (১১ জানুয়ারি) তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় গ্রেফতারের পর ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ।
এর আগে শনিবার ভোরে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বাশিল এলাকা থেকে শরিয়ত সরকারকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি মির্জাপুর উপজেলার জামুর্কী ইউনিয়নের আগধল্যা গ্রামের পবন মিয়ার ছেলে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, শরিয়ত সরকার গত ২৪ ডিসেম্বর ঢাকার ধামরাই থানাধীন রোহাট্রেক এলাকায় পালা গানের একটি অনুষ্ঠানে ইসলাম নিয়ে ‘কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্য করেন। পরে তা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হলে সমালোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
পরে ৯ জানুয়ারি শরিয়ত বয়াতির বিরুদ্ধে ধর্মীয় নিরাপত্তা আইন-২০১৮ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে উপজেলার আগধল্যা গ্রামের মাওলানা মো. ফরিদুল ইসলাম বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় করেন। এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সায়েদুর রহমান বলেন, বয়াতি শরিয়ত সরকারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের হয়েছে। পরে তাকে গ্রেফতার করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে টাঙ্গাইল আদালতে পাঠানো হয়। আদালতের শনিবার বিকেলে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। বর্তমানে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
বিচারগানের এক ভক্ত বলেন, শরিয়ত সরকার ঐ অনুষ্ঠানে এমন কোনো কথা বলেন নি যার জন্য তাকে গ্রেফতার করা যায়। তিনি আরো বলেন, বিচারগান সম্পূর্ণ ইসলামী গান, যা শুনলে মুসলমানের মন আল্লার প্রেমে আসক্ত হয়। শরিয়ত সরকারের কোনো কথা ‘কুরুচিপূর্ণ’ ছিলো না।
এ বিষয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সাকার মুস্তাফা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমার বিশ্বাস নিউজগুলো যারা করেছে ভিডিওটা একবারও শোনেও নি। শুনলে এ ধরনের শিরোনাম করবার কথা না। শিরোনামগুলো এমনভাবে করা যেকোন সাধারণ মানুষ, ধর্মপ্রাণ তো বটেই-দেখামাত্র বিভ্রান্ত হবে। সুতরাং সাংবাদিকদের মত সমাজে অগ্রগামী ব্যক্তিদের কাছে আরও দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশিত।” ইতোমধ্যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শরিয়ত সরকারের মুক্তি চেয়ে অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন পোস্ট দিয়েছেন।