গত ২৭ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) সন্ধ্যায় সিডনির হার্স্টভিল সিভিক সেন্টারে একুশে একাডেমি অস্ট্রেলিয়া ইনক ‘গায়ত্রী সন্ধ্যায় যাপিত জীবনের গল্প’ শীর্ষক এক সাহিত্য সন্ধ্যার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক সেলিনা হোসেন ও তাঁর স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেনকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরুর পর দম্পতিকে সম্মানসূচক ক্রেস্ট প্রদান করে একুশে একাডেমি অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি স্বপন পাল, সহ সভাপতি নোমান শামীম, সাধারণ সম্পাদক জন্মে জয় রায় ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নেহাল বারী প্রমুখ।

সাহিত্য সন্ধ্যায় সেলিনা হোসেন এবং তাঁর জীবনসঙ্গী বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন প্রতিষ্ঠিত ‘ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশন’কে ১৬৮০ ডলার অনুদান প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য, ফারিয়া হোসেন লারা বাংলাদেশের প্রথম প্রশিক্ষক নারী বৈমানিক ছিলেন। যিনি ১৯৯৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর এক বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন।
ড. শাখাওয়াৎ নয়নের সঞ্চালনায় এই সন্ধ্যায় সেলিনা হোসেন উপস্থিত সুধীজনদের সঙ্গে তাঁর শিক্ষা, কর্মজীবন, সাহিত্য ও অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। সেলিনা হোসেন বলেন, সততার সাথে কাজ করায় কখনো কোন প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়নি বলে সাহিত্যের জায়গাটা তৈরী করে নিতে পেরেছি। আমাদের নতুন প্রজন্মকে সাহিত্যের রসে আলোকিত করতে হবে। সাহিত্যে বৈচিত্রতার জানাতে গিয়ে তিনি প্রতিটি কাজেই তাঁর স্বামী অনুপ্রেরণার কথা উল্লেখ করেন।দেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে সাহায্য করার জন্যই লারা ফাউন্ডেশন গড়ে তোলার কথা জানান তিনি।

বাংলা কথা সাহিত্যে শুধু নারী লেখক নয়, বরং যে কোনো বিচারেই সেলিনা হোসেনের নাম সম সাময়িককালে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কারসহ দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কারে তিনি ভূষিত এবং সম্মানিত হয়েছেন। ভারতের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডক্টরেট (অনারারি) ডিগ্রিতে ভূষিত করেছে। পৈতৃক সূত্রে তার বাড়ি বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলায় হলেও, বাবার কর্মসূত্রে ৪৭ সালের ১৪ জুন রাজশাহীতে তার জন্ম।
একদিকে বঞ্চিত, অবহেলিত এবং দরিদ্র মানুষের জীবন-জীবিকা, মানবসত্তা নিয়ে যেমন তিনি লিখেছেন, অন্যদিকে তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বাঙালির সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক জীবনের এমন কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা নেই, যে বিষয়কে উপজীব্য করে তিনি গল্প, উপন্যাস লেখেন নাই। ছিটমহল থেকে জলমহাল, চা বাগানের শ্রমিক থেকে নাগরিক জীবন, নারী নির্যাতন এবং উন্নয়ন, কোনো অনুষঙ্গকেই তিনি বাদ দেন নি। এত বিচিত্র বিষয়ে বাংলা ভাষার আর কোনো কথাসাহিত্যিক লেখেন নি। ইংরেজি, ফরাসি, রুশ, ইতালিনো, জাপানি, আরবি, উর্দু, অহমিয়া, তেলেগু, তামিল, মারাঠি, মালায়লাম, কন্নড় ভাষায় তার রচনা অনূদিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জাপান, ভারত এবং বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তার উপন্যাস পাঠ্যপুস্তক হিসেবে পড়ানো হয়।

দীর্ঘ পঞ্চান্ন বছরের সাহিত্যচর্চার জীবনে তিনি বড়দের পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের জন্যও লিখেছেন ছত্রিশটি বই। ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিকায় তিনিই এখন পর্যন্ত সর্বাধিক সংখ্যক উপন্যাস রচনা করেছেন।
একুশে একাডেমি অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি ডক্টর স্বপন পাল অনুষ্ঠানের প্রধান সহযোগী ‘প্রভাত ফেরী’ এবং অন্যান্য সহযোগী ‘মুক্তমঞ্চ’, ‘রয়াল সিটি সলিসিটরস’, ‘ফার্স্ট একাউন্ট্যান্ট, টপআপ প্লাজা এবং বাংলা সাহিত্য সংসদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং শুভানুধ্যায়ীদের ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।