এমন বিষন্ন বৃষ্টিমাখা বিকেলে,
ক্লাস ফাঁকি দিয়ে তোমার ডিপার্টমেন্টের সামনের টং দোকানের
পলিথিনের নিচে কাক ভেঁজা হয়ে আশ্রয় নিতাম
মামা লজ্জার হাসি দিয়ে
বেশি লিকারের চা হাতে দিয়ে বলতো
“আফা আইসে আইজকা, আমি নিজে দেখসি, মামা , টুলে বসেন “
আমি পানসে শীতল চায়ের চুমুকে
অপেক্ষার প্রহর গুনতাম।
সময় থমকে গেলে হুশ করে রাস্তার পানি ছিটিয়ে
দ্রুত চলে যেত কোন প্রাইভেট কার
মধ্যবিত্ত প্রেমিক আমি
বৃষ্টির পানি থেকে বই গুলি বাঁচানোর যুদ্ধে লিপ্ত।
সন্ধ্যে নামলে,
রাস্তার নিয়ন আলো জ্বলে উঠতো।
আমার পায়ের কাছের কুকুরটাও
একসময় চলে যেত জীবনের প্রয়োজনে।
তোমার জন্য করা প্রতীক্ষাও আমার মধুর লাগতো খুব।
পাখি ডাকা ক্লান্ত দিনের শেষে তোমার ক্লাস শেষ হলে,
আরও অনেক রঙিন ছেলে-মেয়ের সাথে
তুমি হেলে দুলে বেড়িয়ে আসতে।
আমি একটু এগিয়ে গেইটের কাছে দাঁড়াতাম,
বিভ্রান্ত নিজেকে আড়াল করে তোমাকে একটু কাছে থেকে দেখার চেষ্টা..
বৃষ্টির দোহাই দিয়ে ডিপার্টমেন্টের বখাটে বড় ভাইয়াটা
কালো গ্লাসের পাজেরোতে তোমায় উঠিয়ে নিতো
বিষাক্ত ধোঁয়া তুলে আমায় অবহেলায় ফেলে রেখে চলে যেতে তুমি।
জ্বরে কেঁপে আমি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতাম,
যদি জানালা খুলে এলো চুলে একবার পেছনে তাকাও।
আমি জানতেও পারতাম না,
সেই বিশ্রী হাত তোমায় ছুঁতে চাইতো কিনা!
সেবারও বর্ষা ছিল,
শেষ সেমিস্টারের আগে টানা নয় দিন ক্লাসে আসোনি।
মামুর দোকানে আমার অনেক চা এর বিল বাকি পড়ে গেলো
রাত করে বাড়ি ফিরেছি, তোমার দেখা পাইনি,
বাবার কত বকুনি খেয়েছি…
যেদিন এলে,
তোমার হাত ভরা মেহেদী দেখেছিলাম।
হৃদয় চিরে নিলে রক্তের যে রং হয়
তেমন..
সরকারী ভার্সিটির একটি অতি সাধারণ
গরীব ছেলে একবুক ভালোবাসা
তোমার জন্য জমিয়ে রেখেছিল,
দিতে পারেনি।
আজও ভালোবাসা বোঝা হয়ে আছে
তুমি জানলেও না।
আমার এখন কালো গ্লাসের দামি গাড়ি আছে
খুব জানতে ইচ্ছে করে,
তুমি সুখে আছো তো?
রুবেল, সিডনী