ফরিদ আহমেদ কাউসার। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নিউজিল্যান্ডের নাগরিক। দেশের বাড়ী সিলেটে। দেশে প্রকৌশলী হিসাবে চাকুরী করে প্রায় ২৭- ২৮ বছর নিউজিল্যান্ডে আছেন। নিউজিল্যান্ডে আসার কয়েক বছর পর এক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি পঙ্গু হয়ে হুইল চেয়ারে চলাচল করেন। তিনি একজন সফল হোমিও প্যেথিক চিকিৎসক।
এই বছরের ১৫ই মার্চ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরের আল নূর মসজিদে এক সন্ত্রাসীর গণ গুলিবর্ষনের ঘটনার সময় তিনি ঐ মসজিদে উপস্থিত ছিলেন। সশস্ত্র সেই হামলায় সৌভাগ্য ক্রমে তিনি বেঁচে গেলেও তার প্রিয়তমা স্ত্রী হোসনে আরা আরও ৫০ জনের সাথে শহীদ হন।
সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের শিকার বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিউজিল্যান্ডে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি তুলে ধরতে হোয়াইট হাউসে তিনিও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করার দাওয়াত পেয়েছিলেন। মাত্র কয়েকমাস আগে ঘটে যাওয়া ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে হামলায় তাজা ক্ষত নিয়েই ফরিদ আহমেদ সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন।
কিন্তু সেই হামলায় নিয়ে বিরুপ কোনো মন্তব্য বা সাম্প্রদায়িক কোন বিষয় উপস্থাপন করা তো দূরে কথা, বরং তিনি তার স্ত্রী হত্যাকারীকেও ক্ষমা করে দিয়েছেন। সেই জঘন্য হামলার পর মুসলমানদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশের জন্য ও সহযোগিতামূলক মনোভাবের জন্য তিনি নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সহ সরকার, বিরোধী দল, জনগণ সহ বিশ্ববাসীকে ধন্যবাদ দিয়েছেন।
অন্যদিকে প্রিয়া সাহা নামে বাংলাদেশের এক সংখ্যালঘু সংগঠনের নেতা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করে কিভাবে বা কাদের প্রতিনিধি হয়ে সেখানে গেলেন তা এখনও অস্পষ্ট।নিজ মাতৃভূমির বিরুদ্ধে একগাদা মিথ্যা বানোয়াট তথ্য দিয়ে তিনি সেখণে অনেক ভিত্তিহীন অভিযোগ করে এসেছেন। নিছক ব্যক্তিগত স্বার্থে নিজের মাতৃভূমির বদনাম করেছেন।নিজের সামান্য লাভের জন্য বিক্রি করেছেন নিজের দেশের ও নিজ সম্প্রদায়ের মান ইজ্জত।
অথচ সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সুন্দর ও গঠনমূলক বক্তব্য দিয়ে অনন্য নজির স্থাপন করে এসেছেন আরেকজন বাঙ্গালী মুসলিম নিউজিল্যান্ডের বাসিন্দা ফরিদ আহমদ। নিউজিল্যান্ড ফরিদের মাতৃভূমি না হলেও তিনি তাঁর বক্তব্য কোনোভাবেই তাঁর বর্তমান আবাসস্থলকে, ছোট কিংবা অপমান করেননি।
৮০% শেতাঙ্গ খ্রিস্টানদের দেশ নিউজিল্যান্ডে আরেক শেতাঙ্গ খ্রিস্টান জঙ্গির নৃশংস হামলার কথা উল্লেখ না করে এবং ঐ ঘটনায় নিজ প্রিয়তম স্ত্রী হারানোর ব্যথা ও বেদনা ভুলে তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথাই তুলে ধরেছেন। কারণ তিনি একজন খাঁটী বাঙ্গালী এবং একজন প্রকৃত মুসলিম। এটাই তার দেশপ্রেম, এটাই তার আদর্শ।
ফরিদ আহমদের এমন ভূমিকার আবারো প্রসংশা করেছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরডান। বলেছেন, ফরিদ আহমেদ এমন একজন মানুষ, যিনি মানবতাকেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
জয়তু আমাদের প্রিয় ফরিদ ভাই।
লেখকঃ শফিকুর রহমান অনু
অনারারী কনসাল
অকল্যান্ড নিউজিল্যান্ড