সাজিয়া আফরিনঃ লোভহীন, চাওয়ার পাওয়ার উর্ধে একজন মানবী। উহু পারিনি। খালি পায়ে হলুদ গেঞ্জি পরে, ধানমন্ডি থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্ত হেঁটে গিয়েছিলাম। আমার সাথে আমারই মতো আর একজন হিমু পাগল ছিল।
ধানমণ্ডি থেকে বের হই তখন তুমুল বৃষ্টি। ঢাকা শহর ডুবে যায় অবস্থা। বন্ধু ভেনাস এখন মেঘের দেশে বেশ আছে হয়তো। ও বললো, দোস্তো ডুবে যাওয়া ঢাকা শহর দেখবো। আমি বলেছিলাম আলবৎ দেখবো। বেড়িয়ে পরলাম দুই বন্ধু। পথে পানি উঠায় রিক্সা চালক নেমে পরলেন। আর পেডেল করা যাচ্ছে না অনেক পানি রাস্তায়।
কিছুক্ষন পর রিক্সা চালক থামলেন। হাই হুতাশ করে বললেন আফা, আমার সেন্ডল গেলো কুনাই? সে সেন্ডল খোঁজা খুঁজি করছে। আমি আর ভেনাস বসে থাকতে পারলাম না। আমাদের সাধের বুট খুলে কাদা মাখা পানিতে সেন্ডল (চালকের ভাষায়) খুঁজা শুরু করলাম। কোথাও পেলাম না। বেচারা রিক্সা চালকের মন খুব খারাপ হলো, বার বার বলতে থাকলো, ২৮৫ টাকায় কেনা সেন্ডল। আমাদেরও মন খারাপ হলো, আমরা আমাদের বুট ওনাকে দিয়ে বললাম ভাই- দেখেন লাগে কিনা?
বুট তার পায়ে লাগলো না। কোথা থেকে দুটো টোকাই এসে বললো, আফা আমাগো দেন। আমরা দিয়ে দিলাম। আমরা একদিনের জন্য হিমু হওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না। পকেটে দুজনের সব মিলিয়ে ৩০০ টাকার মতো ছিল। রিক্সা চালকের হাতে টাকা ধরিয়ে দিয়ে বললাম, আপনি যান ভাই।পকেটে টাকা নেই, পায়ে সেন্ডেল নাই ,অদ্ভুত এক অনুভূতি।
অল্প একটু এগিয়ে গিয়ে ফিরে এলাম। ভেনাস বললো, দোস্তো তোর মনে হচ্ছে না কিছু একটা মিসিং। আমি বললাম ঠিক দোস্তো। একটা সিগারেট হাতে দরকার। রিক্সা চালক ভেবেছিলেন টাকা ফেরত নিতে এসেছি। যেই বললাম, আপনার কাছে সিগারেট হবে? উনি বললেন, আফা সিগারেট নাই। বিড়ি আছে। আমরা দুজন দুটা বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে ক্যান্টনমেন্ট চলে আসলাম।
রাস্তা ঘাটের লোকজন বন্যা দেখার মজা বাদ দিয়ে আমাদের দেখছিলো। হুমায়ন আহমেদ আমার অসম্ভব প্রিয় লেখক।এখনো যখন রইটার্স ব্লকে আক্রান্ত হই, উনি এসে হাজির হন, মনে মনে তার সাথে বিস্তর আলাপ আলোচনা হয়।তারপর যেন ঝড়ের গতিতে কলম চলে। লেখা লেখির জগতে আসার পেছনে এটাই একমাত্র কারণ ছিল।
ওস্তাদ ভুল ভাল ক্ষমা করবেন। জানি আপনি যেখানে আছেন বিন্দাস আছেন। পারিবারিক কলহ নেই, রাজনীতির ঝামেলা নেই। হিমু আর রুপার বিয়েটা ওখানেই সেরে ফেলুন ওস্তাদ। আপনি আমার জগৎ জুড়ে আছেন থাকবেন।
লেখকঃ সিডনি প্রবাসী কবি