সাকিনা আক্তার: সকাল থেকেই দেখি আমার সাত বছরের ছোট্ট মেয়েটা ভীষণ ব্যস্ত। নিজের পড়ার টেবিলে চিন্তিত হয়ে বসে আছে একটা পেপার আর কিছু পেন্সিল নিয়ে। কিছুক্ষণ পর পর জানালা দিয়ে তাকিয়ে সামনের খোলা আকাশ দেখে অন্যমনস্ক হয়ে।
খুব তাড়াহুড়া করে দৌড়ে এলো, মা চলো বাংলাদেশ চাই। ওর হাতে একটা আঁকা ছবি।
অবাক হয়ে বললাম হঠাৎ করে বাংলাদেশ কেন যেতে চাইছ?
ছবি দেখিয়ে বলল, বাংলাদেশ পৃথিবীর সেরা দেশ তাই একটা মুকুট দিয়েছি । দেখো মা সবার উপরে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা।
তুমি সারাক্ষণ বাংলাদেশ বাংলাদেশ করো। বাংলাদেশ ভালোবাসো। তুমি বাংলায় কথা বল, তুমি বাংলায় গান গাও, তুমি বাংলার গান শোন।
তুমি তো বলো বাংলাদেশের মত এত সুন্দর সবুজ আর কোথাও নেই। বৃষ্টির ছন্দে মন আনন্দে নাচতো তোমার।
পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দরতম সমুদ্র আমাদের।
পহেলা বৈশাখে ছায়ানটের জন্য তোমার মন অস্থির হয়।
চারুকলার নেশায় তুমি ছুটে যাও এখানে বাংলা আর্ট এক্সিবিশনে।
বাংলাদেশ যদি তোমার এত প্রিয় তবে তুমি অস্ট্রেলিয়া এসেছ কেন?
ছবির এই মেয়েটা আমি মা। দেখো দেখো, কি সুন্দর একটা পাখির বাসা। ছোট্ট নীড়ে পাখিরা কিচিরমিচির করে আর সুখে শান্তিতে খেলা করে বেড়ায়।
আমি জানতে চাইলাম তোমার হাতে ওটা কি মা?
হেসে বলে ড্রিম কেচার, রক্ষা ও শান্তির প্রতিক মা।
এতো ভালোবাসা পেছনে ফেলে তুমি কেন অস্ট্রেলিয়া চলে এসেছে মা, আমি চাই কারণটা খুঁজে পেতে।
তুমি আমি বাংলাদেশে গিয়ে ড্রিম ক্যাচার দিয়ে সব সমস্যার সমাধান করে ফেলব। আর কাউকে দেশ ছেড়ে আসতে হবে না মা। বাংলাদেশ হয়ে উঠবে স্বপ্নের মতো সুন্দর, শান্তিময়, ঐশ্বর্য পূর্ণ। বাংলাদেশই আমাদের স্বপ্নের স্বর্গ।
মুহূর্তে আমার চোখ ঝাপসা হয়ে গেল। অদ্ভুত ভাললাগায় হৃদয় ভরে গেল। মনে পড়ে গেল খুব প্রিয় একটা গানের কিছু কথা “আমার এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি”।