সিডনিতে প্রায়
দেড় থেকে দুই ডজনেরও বেশি প্রিন্ট ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল রয়েছে। আছে আইপি টিভি ও
অনলাইন টিভি। অনেকে দেশের প্রিন্ট, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও স্যাটেলাইট টিভির সাথে
কাজ করছেন। বিগত কয়েক বছর আগেও হাতে গোনা কয়েকটি প্রিন্ট পত্রিকা ছিল। তাতে
স্থানীয় বাংলাদেশী কমিউনিটির নিউজও ছিল হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র।
প্রায় আট বছর
আগে আমি যখন কিছু লেখালেখির চেষ্টার পাসশাপাশি প্রিন্ট পত্রিকাগুলিতে প্রকাশ করার
আগ্রহ নিয়ে পাঠাই তখন তার একটাও প্রকাশিত হয়নি। লজ্জিত ভঙ্গিতে পত্রিকার সম্পাদক
মহাদোয়দের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারি যে তাদের সম্পাদকীয় কমিটি আমার লেখাগুলি
প্রকাশের জন্য মনোনীত করেনি। আমি অন্যভাবে চেষ্টা করি। কিছু নিউজ ছবিসহ লিখে
পাঠাই। কিন্তু আমার কোন নিউজও প্রকাশিত হয়না।
পরবর্তীতে দেশের কিছু নামকরা পত্রিকায় গল্প ও নিউজ
পাঠানো শুরু করলাম। তারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলো। কিভাবে নিউজ এডিট করতে হয়
কিভাবে গল্পের প্লট সাজাতে হয় হাতে কলমে শিখতে লাগলাম। তারপর আর পেছনে ফিরে
তাকাতে হয়নি। সম্প্রতি সিডনি থেকে প্রকাশিত পাঠক প্রিয় বেশ কয়েকটি প্রিন্ট
পত্রিকা তাদের সম্পাদকীয় টিমে কাজ করার অফার দিয়েছে।
আসলে আমি বিষয়টি
অন্যভাবে দেখছি। সিডনিতে এখনও দেশীয় সাংবাদিকতা শক্ত ভিতের উপর দাঁড়াতে
পারেনি।আমি বরাবরই এখানকার প্রায় অনেকগুলি প্রিন্ট ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল গুলিতে
নিউজ ও গল্প নামে কিংবা বে নামে কন্ট্রিবিউট করে থাকি। এখন যদি কোন একটি নিদিষ্ট
পত্রিকার সম্পাদকীয় টিমে কাজ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হই সেক্ষেত্রে অন্য
পত্রিকাগুলিতে নিউজের ঘাড়তি দেখা দিতে পারে। যা হয়তো এখানকার সংবাদ মিডিয়াকে
টিকিয়ে রাখার জন্য হুমকি হতে পারে।
এখন অনেক কিছুরই
পরিবর্তন ঘটেছে। সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের কোন মেলা বা
অনুষ্ঠান করার আগে অন্ততঃ একটি সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে। রান শিটের মাধ্যমে
তাদের পরিকল্পনা শেয়ারের পাশাপাশি সাংবাদিকদের পরামর্শ অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে
বিবেচনা করে। মেলায় সাংবাদিকদের জন্য ফ্রি এন্ট্রি, গাড়ী পার্কিং সহ মিডিয়া সেলের ব্যবস্থা থাকে।
কয়েক বছর আগে
আমন্ত্রিত সাংবাদিক হয়ে একটি মেলায় গেছি। আয়োজকদের একজন গেটে জানালেন, আমার টিকেট অন্য
একজনকে দিয়ে দিয়েছেন। আমি ধৈর্যের পরীক্ষা দিলাম। অনেকক্ষন অপেক্ষার পর একটি দলিত
মতিথ টিকেট আমাকে করুনা ভরে ধরিয়ে দিলেন।আমি সেই রাতেই অনলাইন ও টিভি নিউজ করলাম।
পরদিন দুপুরে ঐ আয়োজকের ফোন পেলাম। তিনি জানালেন, আপনি তো ভাই চিচিং ফাক করে দিয়েছেন। টিভিতে
আমাদের মেলার নিউজ দেখে দেশ থেকে আমার ছোট বোন ফোন করেছে,
হাহাহা।
তবে মন্দের ভালো এখন কোথায় গেলে পরিচয়পত্র দেখতে চায়না। আগে তো পরিচয়পত্র দেখাতে না পারলে এই মারে তো সেই মারে অবস্থা। গত মাসে একটা অনুষ্ঠানে গিয়ে খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছি। সামনের একজন বয়স্কা ভাবী বলল, দেখেন তো ভাই ভুল করে খাবারের টিকেট বাসায় ফেলে এসেছি। এখন গাড়ীও তো সাথে নেই যে বাসায় গিয়ে টিকেট নিয়ে আসবো। আমি আমার খাবারের টিকেট ভাবীকে ধরিয়ে দিলাম। তিনি প্রশ্ন করলেন, আপনার কি হবে? আমি তাকে অভয় দিলাম। ভাবী খাবারের প্যাকেট নিয়ে আমার জন্য দাঁড়িয়ে রইলো।
আপনার খাবারের
টিকেট কৈ? খাবার দাতা
প্রশ্ন করলেন। আপনাকে তো এইমাত্র টিকেট দিলাম। ঐ তো আপনি নিয়ে ওখানটায় রাখলেন।
তিনি চমকে আমার আপাদমস্তক দেখলেন। মনের সাথে যুদ্ধ করে তাছিল্যের ভঙ্গিতে আমাকে
খাবারের প্যাকেট ধরিয়ে দিলেন। কিছুক্ষন পর আরেকটা খাবারের টিকেট পেলাম। খাবার
দাতা সেই ভদ্রলোকের কাছে গিয়ে টিকেটটা তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললাম, ভাইজান টিকেট তোঁ
পেয়েছেন আবার দয়া করে একটু মিষ্টি করে হাসেন।
গত বছর
প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান কভার করতে কনভেনশন সেন্টারে গেছি। প্রথমদিন উদ্বোধনী
অনুষ্ঠানে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী জুলি বিশপ সহ ঊর্ধ্বতন
কর্মকর্তারা আছেন। আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে প্রশ্ন করলাম,
আমাদের প্রধানমন্ত্রী
এওয়ার্ড নিতে আগামীকাল এই অনুষ্ঠানে আসছেন, তোমার অনুভুতি কি? প্রশ্ন করার পর মনে হোল, আমি ক্যামেরা ও
বুম দুইটা একসাথে কিভাবে ধরবো? আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাহায্য চাইলাম। তিনি
নিজ হাতে বুম তুলে নিলেন এবং আমাকে ক্যামেরা স্ট্যান্ডে বসাতে সময় দিলেন। বিদেশী
সাংবাদিকরা সবাই তাকিয়ে আছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রী তার উত্তর শেষ করে বুম আমার হাতে
ফিরিয়ে দিয়ে বললেন, ম্যানি থাঙ্কস ইয়াং ম্যান।
(চলবে)
নাইম আবদুল্লাহ